২৪খবরবিডি: 'খরচ কমানোর নানা পদক্ষেপ নেওয়ার পরও দেশের ডলার নিয়ে সংকট কাটছে না। ব্যাংকগুলোতে এখনো ডলারের ঘাটতিতে এলসি খুলতে হিমশিম খাচ্ছে ব্যবসায়ীরা। প্রয়োজনীয় পণ্যের এলসি খুলতে গেলেও ডলারের সরবরাহ নেই বলে ব্যবসায়ীদের অনেককে বাইরে থেকে ডলার সংগ্রহ করে দিতে বলছে। এদিকে খোলাবাজারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা উদ্যোগ ও অভিযানের কারণে এক্সচেঞ্জ হাউসে ঘাটতি দেখা দিয়েছে।'
'ব্যবসায়িক মুনাফা করার উদ্দেশে ব্যাংকগুলোর মতো এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো একই আচরণ করছে। ফলে ব্যবসায়ীদের ১০৯ থেকে ১১০ টাকায় খোলাবাজার থেকে ডলার কিনতে হচ্ছে। এতে করে আমদানি খরচ অনেক বেশি পড়ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সংকটের কারণে এলসি খোলা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। ডলার সংকট কাটাতে নানা উদ্যোগ নিলেও পর্যাপ্ত ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। বিকল্প মুদ্রা ব্যবহারের কথা বলা হলেও সেটাও নিশ্চিত করা যায়নি, যার প্রভাব পড়ছে দেশের পুরো অর্থনীতির ওপর। বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, যেভাবে আমদানি খরচ বেড়েছে, তাতে এলসির জন্য পর্যাপ্ত ডলার এখনো পাওয়া যাচ্ছে না। নিত্যপণ্য ছাড়াও মূলধনী পণ্য আমদানি যদি না করা যায় তাতে সংকট আরও বাড়বে। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে উদ্যোগ নিতে হবে। জানা গেছে, বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি কমে যাওয়ায় ডলার সংকট এখনো কাটেনি। রপ্তানির তুলনায় আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির চাপ এখনো ভোগাচ্ছে ব্যবসায়ীদের। ডলার সংকটের কারণে সরকার আমদানিসহ বিভিন্ন খাতে খরচ কমানো উদ্যোগ নেয়। বাংলাদেশ ব্যাংক বিলাসী পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করে ১০০ ভাগ মার্জিন রেখে এলসি খোলার নির্দেশ দেয়।'
'এ ছাড়া প্রয়োজনীয় পণ্যের বাইরে আমদানিকে নিরুৎসাহিত করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া ডলারের বিপরীতে টাকার মান কয়েক দফা কমানো হয়েছে। তবে এসব উদ্যোগে কোনো কাজ হয়নি। পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিদিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারে ডলার সরবরাহ করছে। বিভিন্ন ব্যাংকের চাহিদা বিবেচনায় কেন্দ্রীয় স্বল্প আকারে তাদের ডলার সরবরাহ
দেশে ডলার সংকটের শেষ কোথায়
করছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাজার স্বাভাবিক রাখতে ডলার সরবরাহ করা হচ্ছে। রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। তবে ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চাহিদার তুলনায় যে ডলার সরবরাহ করা হয় তা খুবই কম। ফলে ব্যাংকগুলোকে খোলাবাজার থেকে উচ্চ দরে ডলার কিনতে হচ্ছে।'
'এদিকে ডলার সংকটে থাকা দেশের একাধিক ব্যাংকের পরিস্থিতি ভয়াবহ হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির জন্য এলসি খুলতে পারছেন না। বিলাসী দ্রব্যের এলসির ক্ষেত্রে কড়াকড়ি থাকলেও তারা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির এলসি খুলতে পারছেন না। এমনকি শিল্পের কাঁচামাল, চিকিৎসা সামগ্রী আমদানির জন্য এলসি খোলা যাচ্ছে না।'এলসি খুলতে গেলে ব্যাংক থেকে বলা হচ্ছে বাজার থেকে ডলার কিনে এনে মার্জিনের অর্থ পরিশোধ করতে। এতে বেশি দামে যেমন ডলার কিনতে হচ্ছে তেমনি আমদানি ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে কয়েক গুণ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশে চরম ডলার সংকট শুরু হয়। বিশেষ করে জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের দর নিয়ে বিশ্বব্যাপী বড় ধরনের আর্থিক সংকট শুরু হয়। যার প্রভাবে বাংলাদেশ ভয়াবহ ডলার সংকটে পড়ে। ৮৭ থেকে ৮৮ টাকা দরের ডলার খোলাবাজারে ইতিহাসের রেকর্ড করে ১২০ টাকায় পৌঁছায়। এর পরই বাংলাদেশ ব্যাংক নানামুখী পদক্ষেপ নেয়। সপ্তাহের ব্যবধানে ডলারের দর ১২০ টাকা থেকে ১০৭/১০৮ টাকায় নেমে যায়। সর্বশেষ গতকাল খোলাবাজারে এই দামেই বিক্রি হতে দেখা গেছে। আন্তব্যাংকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত ডলারের দর ১০১ টাকা থেকে ১০৭ টাকা ৬৫ পয়সা। বাস্তবে ব্যবসায়ীদের কিনতে হয় আরও বেশি দামে। এলসি খুলতেও একই দরে ব্যাংকে ডলার লেনদেন হচ্ছে বলে ব্যাংক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, ডলার নিয়ে কোনো অস্থিরতা তৈরি না হয় বা সংকট না হয় সেজন্য দুই সংগঠনের সঙ্গে মিলে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।'
'রপ্তানি বিলের দর ও রেমিট্যান্সে বিল হবে তার চেয়ে একটু বেশি। এই দুই দর সমন্বয় করে একটি দর নির্ধারণ করে এর ওপর ১ টাকা বেশি ধরে এলসি খুলবে ব্যাংকগুলো। এলসি খোলার ক্ষেত্রে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে অগ্রাধিকার থাকবে। পাশাপাশি কোনো ধরনের অপ্রয়োজনীয় বা লাক্সারি আমদানিতে আগে থেকে বিধিনিষেদ আছে। সেটা যাতে পূর্ণ ভাবে পরিপালন হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক নজর রাখছে। এ ছাড়া ব্লুমবার্গ দর ঠিক রাখছে কিনা সেটা নিয়েও আমরা কাজ করছি। কারণ আগে দেখা গেছে আন্তর্জাতিক দরের চেয়ে ব্যাংকগুলো বেশি দর নির্ধারণ করত। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তাতে আশা করছি ডলারের সংকট কমে আসবে।'